এক কাপ চায়ের
সঙ্গে
- মলয়কান্তি দে
বিকেডি স্যারের সকালের কোচিং ভেঙ্গেছে।
তার মানে কাঁটায় কাঁটায় সকাল নটা। অভ্যেসমত বিকেডি বারান্দায় এলেন। গেটের বাইরে
সার দিয়ে রাখা চারটে বাইক আর তিনটে সাইকেল। বাইকগুলো ভ্রুম্ ভ্রুম্ শব্দে গর্জে
উঠলো প্রায় একসঙ্গে। তারপর গর্র্র্র্ শব্দ তুলে গলি কাঁপিয়ে বেরিয়ে গেল। গলির
রাস্তাটা দুর্দশাগ্রস্ত, ভাঙ্গা-ভাঙ্গা, উঁচু-নিচু। সব সময় ভয় থাকে এই না কেউ কাত
হয়ে পড়ে যায়, হাত পা ভাঙ্গে, রক্তপাত ঘটে।
কিন্তু বাইক-ওলারা ওস্তাদ। কাত হতে হতেও সামলে নিয়ে বেরিয়ে যায় বাহাদুর
স্টান্টবাজের মত। ওদের এই বাহাদুরি নীরবে হজম করে নিয়ে একটু ধীরে সুস্থে সাইকেল-ওলারা
প্যাডেলে চাপ দেয়। শুরুতে একবার ডানে, একবার বাঁয়ে কেতরে তারপর সোজা হয়ে গতি বাড়ায়।
মোট আটজন ছাত্র আর তিনজন ছাত্রী ছ’টা বাহনে বাঁটাবাঁটি করে চলে গেল।
বিকেডি স্যারের এই বারান্দায় এসে দাঁড়ানোর
এমনিতে কোনও প্রয়োজন নেই। দশ বছর আগে যখন এখানকার কলেজে চাকরি পেয়ে এই বাড়িটাতে
থাকতে আসেন, এবং ছাত্র পড়াতে আরম্ভ করেন, তখন
পড়ানো শেষ হলে এভাবে এসে বারান্দায় দাঁড়াতেন। একটা দুটো মেয়ে পড়তে আসত। বিকেডির
কেমন যেন মনে হত, এই ছাত্রীদের যাতে কেউ উত্যক্ত না করে, অন্তত স্যারের বাড়ির
সামনে, সেটা খেয়াল রাখা তার দায়িত্ব। এতেই একটা অভ্যেস তৈরি হয়ে গিয়েছিল। এখন অবশ্য
ছেলেরা মেয়েরা এমন সহজ ভাবে মেশে, গার্জেন-গিরি ফলানোর জায়গা থাকে না। এখন যে তিনি
আগের মত বারান্দায় এসে দাঁড়ান, সেটা অনেকটা এই ভাঙ্গা রাস্তার কৈফিয়ত সেজে। চিন্তাও
হয়, কেউ পড়ে টড়ে গেলে কোচিং-এর বদনাম হয়ে যাবে বাজারে। ছাত্র ছাত্রীরা চলে যাবার
পর বিকেডি ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করলেন।
ছাত্র পড়ানোর জন্য বেঞ্চ ডেস্ক বানিয়ে
নিয়েছেন বিকেডি। এ ছাড়া তার বইপত্র রাখার জন্য একটা কাঠের টেবিল রয়েছে ঘরের এক
কোনে। টেবিলের একটা ড্রয়ার খুলে খৈনির প্যাকেট হাতে নিতেই তার স্ত্রী এসে ঢুকলেন।
এই শোনো-, তারপর বিকেডির হাতে খৈনির প্যাকেট দেখে মুখ বেঁকিয়ে বললেন, এ:, কলেজের
প্রফেসর খৈনি খাচ্ছে দেখো, ছিঃ। তবে কি সিগারেট খাবো? তা-ও ভালো। একটু ভদ্রলোক
দেখায়। স্ত্রীর কথায় গুরুত্ব না দিয়ে বিকেডি পরিমাণ মত খৈনি বাঁহাতের তালুতে নিয়ে
ডান হাতে ডলতে শুরু করলেন। মুখে বিরক্তি বজায় রেখে স্ত্রী বললেন, যাকগে, যা খুশী
কর, বলছিলাম রাতের চিকেন ফ্রিজে রাখা আছে, খাবে এখন? গরম করবো? যা খুশী করো, তবে
তাড়াতাড়ি কর। এই সময় ঘরের ডোরবেল বাজল। দরজার দিকে তাকিয়ে স্ত্রী বললেন, এখন আবার
কে এলো? হবে কোনও ছাত্র, কিছু ফেলে গেছে, বা অন্য কোনও দরকারে। তুমি যাও, তাড়াতাড়ি
করো।
স্ত্রী বেরিয়ে গেলে বিকেডি খৈনির টিপ
ঠোঁটের ফাঁকে চালান করে দিয়ে দরজা খুললেন। ভেবেছিলেন কোনও ছাত্র, তার জায়গায়
দেখলেন অন্য তিনটি ছেলে। কুড়ি বাইশ বছরের ছেলেটিকে মনে হল পাড়ায় দেখেছেন, বাকী
দুজন অচেনা। মুখে একটু লজ্জা লজ্জা হাসি ঝুলিয়ে পাড়ার ছেলেটি বলল, স্যার, এরা আপনার
সাথে একটু কথা বলবেন। ‘স্যার’ বলে ডাকলেও ছেলেটিকে, বা এদের কাউকেই, কখনও তাদের
কলেজে দেখেননি বিকেডি। এই সময়টাতে বিকেডির ব্যস্ততা থাকে। ঝট পট স্নান খাওয়া সেরে
কলেজে ছুটতে হবে। ফার্স্ট পিরিয়ডেই ক্লাস আছে। উনি সময় নষ্ট না করে বললেন, এখন নয়,
এখন সময় হবে না। পেছন থেকে অন্য একটা ছেলে, সাতাশ আটাশ হবে বয়স, বলল, বেশী সময়
নেবো না স্যার। জাস্ট দু মিনিট। ছেলেগুলো চাঁদাপার্টী নয়। হলে বোঝা যেত। হাতে রসিদ
বই জাতীয় কিছু থাকতো। বিনা-বাক্যব্যয়ে বিদায় করা যেত। এরা কারা এবং কি জন্যে এসেছে
বোঝা যাচ্ছে না। তাই একটু কৌতূহলও জাগছে। বিকেডি বললেন, দু মিনিট হলে এস। কিন্তু
তার বেশী সময় দিতে পারব না। আমার কলেজ আছে। বলে বিকেডি দরজা ছেড়ে দাঁড়ালেন।
ছেলেগুলো ভেতরে ঢুকে দাঁড়িয়ে থাকল, বিকেডি বসতে বললেন না। সাতাশ আটাশ বছরের ছেলেটা
মুখে কঠিন কর্তৃত্বের একটা ভাব এনে বলল, আমরা একটা রিকোয়েস্ট নিয়ে এসেছি স্যার।
আপনি মুসলিম ছেলেদের পড়ানো বন্ধ করুন।
কেন?
বিকেডি আকাশ থেকে পড়লেন। তার কোচিং-এ
তিনটে মুসলিম ছাত্র আছে। কলেজেও যথেষ্ট সংখ্যায় মুসলিম ছাত্র আছে। সবগুলো কোচিং-এই
কিছু সংখ্যক মুসলিম ছাত্র-ছাত্রী থাকে। মুসলিম অধ্যাপক আছেন চারজন। ওদেরও কেউ কেউ
বাড়িতে ছাত্র পড়ান। সেখানেও তিরিশ ভাগ মুসলমান ছাত্রের সঙ্গে সত্তর ভাগ হিন্দু। এরকম
নিষেধাজ্ঞার অর্থ কী? বিকেডির চোখে মুখে বিরক্তি স্পষ্ট।
সাতাশ আটাশ এবার তার চোখে চোখ রেখে
একটু রোয়াব দেখানো গলায় বলল, কেন স্যার, আপনি জানেন না? আপনার চোখের ওপর দিয়ে রোজ
ওই মোল্লাটা একটা হিন্দু মেয়েকে বাইকের পেছনে বসিয়ে নিয়ে যায়, আপনি দেখেন না?
মোল্লা? হ্যাঁ, ইমরান নামের ছেলেটা
বেশীর ভাগ সময় ধপধপে শাদা পাজামা পাঞ্জাবীর সঙ্গে মাথায় সুন্দর কারুকাজ করা
মুসলমানি তক্কি পরে আসে। এমন কি এমনি শার্ট প্যান্টের সঙ্গেও পরে। ভদ্র ছেলে, খুবই
মার্জিত আচার আচরণ। কিছু প্রশ্ন করলে অন্যরা যখন বলে অয় স্যার, ইমরান বলে জী অয়
স্যার। চেহারা পোষাকে মনে হয় সম্পন্ন পরিবারের ছেলে। হয়তো একটু বেশী ধর্মনিষ্ঠ। সে
তো কেউ হতেই পারে। তাতেই ও মোল্লা হয়ে গেল? আর হলেই বা, আপত্তিটা কোথায়? শিবানী
নামের একটু মলিন চেহারার মেয়েটাকে মনে পড়ল। সকালে আসার সময় মেয়েটা কীভাবে আসে
বিকেডি খেয়াল করেনি নি, কিন্তু ফেরার সময় কখনও কখনও ইমরানের বাইকের পেছনে ওঠে, এটা
দেখেছেন। বাইকে গেলে মেয়েটার সময় বাঁচে। ওদেরও তো বাড়ি গিয়ে আবার সময় মত ক্লাসে
পৌঁছতে হবে। হয়তো ওর আর ইমরানের বাড়ি একই রাস্তায়, তাই ইমরান ওকে নামিয়ে দিয়ে যায়।
এ নিয়ে তো কারও কোনও মাথাব্যথা নেই? তাহলে এদের আপত্তির কারণ কি? আর ইমরানের বাইকে
চড়ে শিবানীর যাওয়া নিয়ে যদি আপত্তি হয়, তার জন্যে সব মুসলিম ছাত্রকে পড়ানো বন্ধ
করতে হবে কেন?
কিন্তু একে তো এখন তার কথা বলারই সময়
নেই, তার উপর এই বিষয়টা নিয়ে কথা বলার কিছু আছে বলেও তার মনে হল না। তাই উনি
বললেন, তোমরা যাও এখন। আমাকে বেরোতে হবে। তৃতীয় ছেলেটি, যে এতক্ষণ চুপ করে ছিল, সে
এবার পেছন থেকে বলল, আপনি আমাদের কথা শুনবেন না? হাত তুলে ওকে থামিয়ে দিয়ে সাতাশ
আটাশ এবার সিদ্ধান্ত জানানোর ভঙ্গীতে বলে, এই মাসটা আপনাকে দিচ্ছি স্যার। সামনের
মাস থেকে ওই মোল্লাকে এদিকে দেখলে ওর বিপদ হবে। তার দায় কিন্তু থাকবে আপনার। তখন
আমাদের দোষ দেবেন না। বলে দুপ দাপ শব্দে পা ফেলে বেরিয়ে গেল। ওর পেছন পেছন বাকী
দুজন।
দরজা বন্ধ করতে করতে বিকেডির কপালে
ভাঁজ ফোটে। এ তো মনে হচ্ছে একটা উটকো ঝামেলায় পড়া গেল! কিন্তু এখন তার দুশ্চিন্তা
করারও সময় নেই। দেরী হয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে আবার এসে ঢুকলেন তার স্ত্রী। কেন এসেছিল
গো ছেলেগুলো? তার মানে স্ত্রী জানালা দিয়ে দেখেছেন ছেলেগুলোকে। তুমি চেনো ওদের?
না, চিনি না। তবে কেমন যেন উগ্র মেজাজের মনে হল। একটা তো এ পাড়াতেই থাকে। সারাদিন গুলতানি
করে বেড়ায়। পড়া শোনা কিছু করে বলে মনে হয় না। কী বলল? কপালের ভাঁজ মসৃণ করে দিয়ে
বিকেডি বললেন, জিজ্ঞেস করল রান্না হয়ে গেছে কি না।
কলেজে টানা দুটো ক্লাস শেষ করে বিকেডি
কমন রুমে এসে প্রথমেই এক গ্লাস জল খেলেন ঢক ঢক করে। সারা শরীর সেই জল শুষে নিল।
একটা ঠাণ্ডা তৃপ্তি ছড়াল শরীর জুড়ে। লম্বা শ্বাস নিয়ে উনি তার নির্দিষ্ট চেয়ারে
বসলেন আরাম করে। পরবর্তী দুটো পিরিয়ড অফ। উল্টোদিকের চেয়ারে বসে লুৎফুর রহমান একটা
বড় খাতায় কি সব নোট করছে, সামনে তিনটে বই খোলা। কখনও এটার পাতা ওলটাচ্ছে, কখনও
ওটার। নিশ্চয়ই ছাত্রদের জন্যে নোট তৈরি করছে। এই ফাঁক-গুলোয় বিকেডিও নানা বইপত্র ঘাঁটেন,
অঙ্ক করে রাখেন, যাতে ক্লাসে বা কোচিং-এ ছাত্রদের সামনে অপ্রস্তুত হতে না হয়। আজও
তেমন কিছু শুরু করার কথা ভাবতে গিয়েই তার মনে পড়ল সকালবেলার ঘটনাটা। এতক্ষণ ক্লাসে
বকবক করে করে সে সব মাথা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল। বিকেডি এখন একটু ঠাণ্ডা মাথায় সমস্ত
ব্যাপারটা ভাবতে বসলেন। ঠাণ্ডা মাথা তাকে বোঝাল, ন্যায়-অন্যায়, ঠিক-বেঠিক এসবই আসলে
আপেক্ষিক। অন্য অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে। বিকেডি ঝামেলায় জড়াতে চান না। কলেজের
ক্লাস আর বাড়ির কোচিং ছাড়া অন্য কোনও ব্যাপারে তার কোনও উৎসাহ নেই। চাকরি পাবার পর
থেকেই তিনি জানেন তাকে অনেক টাকা রোজগার করতে হবে। তিনি জানেন সংসারে টাকার
গুরুত্ব কতখানি। টাকা নেই তো কিছুই নেই। এখন এই চাকরি তাকে যতখানি সুযোগ দেয়, তার
সদ্ব্যবহার করে তাকে টাকা জমাতে হবে। বাড়িঘর বানাতে হবে। প্রাচুর্যের নানা উপকরণ করায়ত্ত
করতে হবে। ছেলেমেয়ের উচ্চশিক্ষার জন্যে টাকা লাগে। অসুখ বিসুখে টাকা লাগে। টাকাই
এখন তার ধ্যান জ্ঞান। একটা ছাত্র তার কাছে দুখানা হাজার টাকার নোট। মুসলমান
ছাত্রদের যদি না পড়ান, ছাত্রসংখ্যা একজন দুজন কমে যাবে। আবার বাড়িতে যদি কোনও
হুজ্জতি হয়, তাতে অন্য ছাত্রদেরও আসা কমে যাবে। একবার তার মনে হল, এই ঝুট ঝামেলা
থেকে সহজে রেহাই পেতে ছেলে তিনটেকে বলেই দেবেন, তোমরা আর এসো না। তারপরই ছেলেগুলোর
মুখ মনে পড়ল। বাচ্চা বাচ্চা সরল উৎসাহী মুখগুলো, কত দূর থেকে পড়তে আসে। এমন কথা
ওদের বলতে পারবেন উনি? এমন কথা যে এক লহমার জন্যেও তার মনে এসেছিল, সে জন্যে
বিকেডির অনুশোচনা হল। ছিঃ, এত নীচে নামতে হবে? কিন্তু ঝামেলাটা তাহলে মিটবে কী করে?
কারও সাথে পরামর্শ করতে পারলে ভাল হত।
কিন্তু কার সাথে করবেন? নিজেদের কোচিং-এর বিষয়ে অধ্যাপকরা একে অন্যের সাথে বিশেষ
কথাবার্তা বলেন না। এ নিয়ে কারও কারও মধ্যে রেষারেষি চলে, তো কারও কারও মধ্যে
হিংসা-হিংসি। অতনু সাহার কথাটা স্বাভাবিকভাবেই প্রথম মনে এল। অতনু সাহা টিচার্স
এসোসিয়েশনের সেক্রেটারি। বামপন্থী। একেবারে পার্টীর লোক। সুযোগ পেলেই দক্ষিণ-পন্থীদের
মুণ্ডপাত করেন। আজকাল মুণ্ডপাতের অছিলাও জুটছে খুব। প্রায়ই এমন কিছু ঘটনা ঘটছে,
যাতে অতনু সাহা বাজার গরম করার লাগাতার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছেন। অতনু-দাকে ঘটনাটা বললে
উনি এটা নিয়ে বিশাল কিছু কাণ্ড ঘটিয়ে দিতে পারেন। হয়তো একটা মিটিং, মিছিল কিংবা ধর্নারই
বন্দোবস্ত করে ফেলতে পারেন। তাতে বিকেডির লাভ নেই কিছু। বরং একটা ব্যাড পাবলিসিটি
হয়ে যাবে। যদি ওই ছেলেগুলো কাল ইমরানকে ধরে বেধড়ক পিটিয়ে দেয়? হয়তো পুলিশ কেস হবে।
হয়তো ছেলেগুলোকে পুলিশ ধরবে। কিন্তু বিকেডির কোচিং-এর বদনাম রটে যাবে বাজারে।
ছাত্র আসা কমে যেতে পারে।
অতনু সাহার বিপরীত অবস্থানে আছেন
সত্যেন চক্রবর্তী, রাজনীতির বর্ণ-পরিচয়ে যিনি গেরুয়া, এবং সাম্প্রতিককালে হঠাৎ
নিজেকে ক্ষমতাশীল ভাবতে শুরু করেছেন। এই মুহূর্ত্যে তার প্রধান লক্ষ্য দুটো। এক,
আগামী কলেজ নির্বাচনে তার গেরুয়া ছাত্র সংগঠনটিকে বেশী বেশী আসনে জেতানো, পারলে
ছাত্র সংসদে গরিষ্ঠতা পাইয়ে দেওয়া, আর দুই, অতনু সাহাকে হটিয়ে টিচার্স
এ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক হওয়া। দুটো কাজই কঠিন, তবে সামান্য হাওয়া ঘোরাতে পারলে
অসম্ভব নয়। সত্যেন চক্রবর্তীর তৃতীয় একটা গোপন বাসনার কথা লোকে বলাবলি করে। সেটা
হল আগামী বিধানসভা নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়া। সত্যেন চক্রবর্তীকে কথাটা জানালে উনি
কী করবেন বলা শক্ত। হয়তো ছেলেগুলো কারা জেনে নিয়ে বলে দেবেন এরকম না করতে। আবার হয়তো
উনি ওই ছেলেগুলোর পক্ষ নিয়েই লেকচার দিতে শুরু করবেন। লাভ জেহাদের তত্ত্ব ঝাড়বেন।
বলবেন তাড়িয়ে দাও ওদের। তাহলে বিকেডি কী করবেন? একটু আগে সারা শরীরে একটা ঠাণ্ডা
তৃপ্তি ছড়িয়েছিল। এখন সেখানে মরুভূমির শুষ্কতা অনুভব করছেন বিকেডি। উঠে গিয়ে আরেক গ্লাস
জল খেলেন।
পিরিয়ডের ঘণ্টা বাজতে বই খাতা গুছিয়ে
লুৎফুর বেরিয়ে গেল, ওর ক্লাস আছে। আরও দু একজন বেরোলেন। ক্লাস শেষ করে এসে কমন রুমে ঢুকলেন দু তিনজন। দরজার সামনে সত্যেন
চক্রবর্তীকে দেখা যাচ্ছে। তার সঙ্গে কয়েকটা ছেলে, উঁচু ক্লাসের ছাত্র। উত্তেজিত গলা
শোনা যাচ্ছে সত্যেনের। প্রতিবাদ করবে তোমরা। করতে দেবে না ওই নাটক। এই সব
দেশ-বিরোধী এজেন্ডাকে কোনও ভাবেই সফল হতে দেবে না। বলতে বলতে সত্যেন চক্রবর্তী এসে
ঘরে ঢোকেন। সঙ্গে ঢোকে সেই ছেলেগুলো। বিকেডি একবার দেখে নিলেন কমন রুমে কে কে আছেন
এই মুহূর্ত্যে। অন্যরাও ঘাড় ঘুরিয়ে ওকে, এবং ওর সঙ্গের ছেলেগুলোকে দেখল। বুঝতে চাইল
কি নিয়ে চলছে কথাবার্তা। সত্যেন এবার গলা নামিয়ে, অনেকটা ফিস ফিস করে, হাত মাথা
নাড়িয়ে ছেলেদের কিছু নির্দেশ দিলেন। সব শোনা গেল না। শুধু শেষ কথাটাই বোঝা গেল, - তোমরা
শুধু এইটুকু করো, বাকীটা আমি দেখব। ছেলেগুলো বেরিয়ে যেতে সত্যেন তার চেয়ারের দিকে
এগোলেন। কমনরুমে উপস্থিত সব কয়টি মুখে আলাদা করে চোখ ফেলে ফেলে দেখলেন। তারপর বসলেন
তার নির্দিষ্ট চেয়ারে। বিকেডি অন্যমনস্ক চোখে সত্যেন চক্রবর্তীর দিকেই তাকিয়ে ছিলেন।
চোখাচোখি হবার পর আর চোখ ফেরাবার সুযোগ ছিল না। কিছু বলতেই হয়। তাই জিজ্ঞেস করেন, কি
হয়েছে সত্যেনদা, বেশ উত্তেজিত মনে হচ্ছে? আর বল কেন। সত্যেন যেন এই সংকেতটুকুরই
অপেক্ষায় ছিলেন। বলতে শুরু করলেন, দেশের সংস্কৃতি, দেশের মনিষী, দেশের কোনও কিছুর
প্রতি এদের কোনও শ্রদ্ধা নেই। বিদেশের সব কিছুই ওদের চোখে ভাল, সব কিছু মহান। দেশের
ঐতিহ্য যত পারো খাটো কর, বিদেশীদের কাছে বাহবা জুটবে। চাই কি নোবেল টোবেলও পেয়ে
যেতে পারো।
মৃদুলা কানুনগো বসেছিলেন সত্যেন
চক্রবর্তীর দুটো চেয়ার পরে। নিপাট ভাল মানুষের মত বললেন, এটা কিন্তু সত্যি। আমাদের
নিজস্ব সংস্কৃতি যেন সবাই ভুলতে বসেছে। নাচ গান বলতে আজকাল যা দেখি আর যা শুনি,
বমি পেয়ে যায় একেবারে। কথাটার অগভীরতা অনুধাবন করতে পারলেও এই সুযোগে সত্যেন এবার গলা
চড়ান। আরে, পেছনে কারা আছে সেটা দেখবে তো। বিদেশী তত্ত্ব কপচে যারা রাজনীতি করে
তারা কী ভাল শেখাবে বল। সারা দেশে তো অস্তিত্ব বলতে কিছুই নেই, শুধু এর ওর লেজুড়
হয়ে টিভিতে মুখ দেখায়। কথাগুলো বলতে বলতে সত্যেন আড়চোখে দীপেন্দু সেনগুপ্তকে
দেখছিলেন। দীপেন্দু অবশ্য আজকের কাগজের এডিটোরিয়েলের পাতায় চোখ নিবদ্ধ করে বসে আছে।
রাজর্ষি দেবনাথ বসেছে কমন রুমের অন্য দিকে, সত্যেনের চেয়ে অনেকটাই দূরে। সেখান
থেকেই গলা তুলে বলল, আরে হয়েছে টা কি সেটা তো বলবেন। কী হয়েছে সেটা দীপেন্দুকে
জিজ্ঞেস কর। ও-ই তো সব কোন্দলের কারিগর। এবার শেষ সামলাক। দীপেন্দু এবার কাগজ থেকে
মাথা তোলে। আমি আবার কী করলাম সত্যেনদা? কেন, নাটকটা তো তুমিই লিখেছ। হ্যাঁ, আমিই
লিখেছি। তো? তো আবার কি। এই রকম নাটক কি করে লিখতে পারলে? সারা নাটক জুড়ে শুধু
আমাদের ধর্মগ্রন্থ গুলোকে নিয়ে কাঁটাছেঁড়া। হিন্দু সংস্কৃতির মধ্যে কিছুই কি ভালো
পাওনা তোমরা? শুধু নিন্দা করে গেছ? সত্যেনদা, নাটকটা আপনি পড়েছেন? আমি পড়িনি।
আমাদের ছাত্ররা বলেছে। ওরা কি মিথ্যে বলবে?
তোমার নাটকে তুমি গেরুয়া রঙটাকেই কাঠগড়ায় তুলেছ। আরে সত্যেনদা, আমার নাটকে
গেরুয়া রঙটা এসেছে একটা প্রতীক হিসেবে। আমি শুধু নাটকে দেখাতে চেয়েছি, যে দর্শন,
যে সংস্কৃতির কথা বলা হয়েছে আমাদের ধর্মগ্রন্থ গুলোয়, সে সবই উচ্চবর্ণের স্বার্থ
বহনকারী সংস্কৃতি। নিম্ন বর্ণের সমস্ত অধিকার খর্ব করার, নিম্ন বর্ণের লোকদের ওপর
আধিপত্য কায়েম করার সংস্কৃতি। এটা আমি নতুন কী বললাম? অনেক ঐতিহাসিক, অনেক গবেষক
এমন কথা লিখে গেছেন। আমি শুধু এই দর্শন, এই সংস্কৃতিকে একটা প্রতীকের মাধ্যমে ধরতে
চেয়েছি। সেই প্রতীক হচ্ছে গেরুয়া। এখানেই তোমাদের কারসাজী। শুধু ধর্ম সংস্কৃতির
নিন্দা করেই ক্ষান্ত হও নি, সরাসরি রাজনৈতিক কটাক্ষ করেছ আমাদের দলকে। সত্যেনদা,
আমার নাটক আপনার পছন্দ না হতে পারে। তা নিয়ে যুক্তি দিন, তথ্য দিয়ে আলোচনা,
সমালোচনা করুন। বাধা দেবেন কেন? বাধা দেব না তো। আমরা কেন বাধা দিতে যাব। তবে
জনগণেরও অধিকার আছে প্রতিবাদ করার। সেটাই এখন হবে। শেষটা সামলিও।
বীণা মোদক বসেছিল বিকেডির বাঁ পাশে। কলেজের
বার্ষিক উৎসবে নাট্য পরিচালনার দায়িত্ব বীণা মোদকের ওপর। ও এবার বলে, সত্যেনদা,
নাটকটা ছাত্ররাই করতে চেয়েছে। দীপেন্দুদা নাটকটা লিখেছে সত্যি, কিন্তু একবারের
জন্যেও ছাত্রদের বলে নি এই নাটকটা কর। ওরা নাটকটা অন্য কোথাও দেখেছে, ওদের ভাল
লেগেছে, করতে চেয়েছে, দীপেন্দুদা রাজী হয়েছেন। ব্যাস। আর আপনি তো জানেন, আপনাদের
ছাত্ররা অন্য একটা নাটক করতে চেয়েছিল। শিবাজীকে নিয়ে। এটাও প্রচলিত নাটক। বহুবার মঞ্চস্থ
হয়েছে। কিন্তু এরা অনেক জায়গায় মূল নাটক থেকে সরে গিয়ে এমন কিছু সাম্প্রদায়িক সংলাপ
ঢুকিয়ে দিয়েছে, যে ওটা করা সম্ভব নয়। তা ছাড়া এই কাজটাও করেছে অত্যন্ত কাঁচা হাতে।
সত্যেন এবার বেশ ঝাঁঝ দেখিয়ে বলেন, নাটকে নতুনত্ব আনা কি অন্যায় কিছু? আগে করে নি
কেউ? ছেলেরা কিছু কিছু জায়গায় মূল নাটক থেকে সরে গিয়ে নতুন নতুন সংলাপ ঢুকিয়েছে। একটা
ফ্রেশনেস এনেছে। ব্যাস, ওতে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে গেল। বীণা মোদক এবার বলেন, আরেকটা
নাটকও কিন্তু জমা পড়েছিল। সেটাও বিখ্যাত নাটক। গ্যালিলেওর জীবন নিয়ে। ওই নাটকে বৈজ্ঞানিক
আবিষ্কারের সঙ্গে ধর্মীয় বিশ্বাসের সংঘাতের কথা আছে। এটাও আজকের দিনে খুব
রেলিভেন্ট। কিন্তু ছাত্ররা শেষ পর্যন্ত দীপেন্দুদার নাটকটাই বেশী পছন্দ করে। এটা
তো বেশীর ভাগ ছাত্রের মত অনুযায়ী হচ্ছে। কয়েকজনের কথায় গুরুত্ব দিয়ে বেশীর ভাগের
মতামতকে উপেক্ষা করি কি করে বলুন। দৃশ্যতই অসন্তুষ্ট সত্যেন চক্রবর্তী এবার বলেন,
ঠিক আছে। যাদের মতামতকে গুরুত্ব দিলে না, এবার দেখো ওরা কি করতে পারে। বলেই সত্যেন
চক্রবর্তী চেয়ার ছেড়ে উঠে বেরিয়ে যান। মৃদুলা কানুনগো বলে উঠলেন, এবার নিশ্চয়ই
প্রিন্সিপালের কাছে গেলেন। আজকাল কথায় কথায় উনি প্রিন্সিপালের ভয় দেখান।
প্রিন্সিপালও কী বুঝে কে জানে সত্যেনদাকে বেশ গুরুত্ব দিতে শুরু করেছেন।
বীণা মোদক এবার দীপেন্দু সেনগুপ্তের
দিকে তাকিয়ে বললেন, এ তো রীতিমত হুমকি! একটা কিছু ঝামেলা পাকানো হবে দীপেন্দু দা।
শেষ পর্যন্ত নাটকটা নামানো যাবে কি না কে জানে। দীপেন্দু সেনগুপ্ত নির্বিকার
চিত্তে বলেন, তা হলে বাদ দিয়ে দাও। ওদের নাটকটাই করে ফেল। বীণা মোদক বললেন, মাথা
খারাপ? তেমন হলে গ্যালিলেওর নাটকটাই করব। কিন্তু ওদের নাটক টা কোনও অবস্থাতেই নয়। বিকেডি
টেনিস খেলা দেখার মত করে একবার ডানদিকে, একবার বাঁদিকে ঘাড় ঘুরিয়ে সকলের সব কথা
শুনে গেলেন শুধু। কথাগুলোর ভেতরে ঢুকলেন না।
পিরিয়ডের ঘণ্টা বাজতে বিকেডি বিমর্ষ
মুখে উঠে ক্লাসের দিকে এগোলেন। তার সমস্যার কোনও সুরাহা আজ হল না। মন দিয়ে ক্লাস
করলেন বিকেডি। ঘণ্টি বাজতে ক্লাস থেকে বেরিয়ে কমন রুমের দিকে এগোচ্ছেন, চোখে পড়ল
প্রিন্সিপালের রুমের সামনে একটা ছোট খাটো জটলা। অতনু সাহাকে ঘিরে কয়েকজন অধ্যাপক।
কৌতূহল নিয়ে বিকেডিও সেই জটলার পিছনে দাঁড়ান। অতনু সাহা বলে চলেছেন, বেলা এগারোটায়
রওয়ানা দিয়ে বদরপুর পৌঁছতেই দেড়টা বেজে গেল। ভাবতে পারো? আধঘণ্টার পথ, তিরিশ
কিলোমিটারও নয়। একজন জিজ্ঞেস করল, বদরপুর থেকেই ফিরে এল ওরা? আরে না। যদিও আশা করার
কিছু ছিল না, তবু শিলচর গিয়ে মেডিকেল কলেজে ডাক্তার দেখিয়েছে। ডাক্তার দেখে বলল সব
শেষ। সার্টিফিকেট লিখে দিল। বলল, ঘণ্টা খানেক আগে এলেও হয়তো কিছু করা যেত। বিকেডি
ঠিক বুঝতে পারছিলেন না, কার কথা বলা হচ্ছে। পাশের অধ্যাপককে জিজ্ঞেস করলেন কার কী
হয়েছে সুমন্ত? হিমাদ্রি-দা। কাল রাতে অসুস্থ হয়ে সিভিল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।
এখানে তো কোনও ব্যবস্থাই নেই। না ডাক্তার, না যন্ত্রপাতি, না কোনও পরীক্ষা নিরীক্ষা।
সকাল হতেই বলল শিলচর নিয়ে যান। আর যেতে যেতেই রোগী শেষ। হিমাদ্রি-দা অসুস্থ, এ খবর
বিকেডি জানতেন না। মারাই গেলেন? মনটা খারাপ হয়ে গেল বিকেডির। একমাথা পাকা চুল সহ হিমাদ্রি-দার
চেহারাটা মনে পড়ল। বেশ হাসিখুশি লোক ছিলেন। পলিটিকাল সায়েন্স পড়াতেন।
বিকেলে অন্য অধ্যাপকদের সঙ্গে বিকেডিও
গেলেন হিমাদ্রি শেখরের বাড়ি। মৃতদেহ নিয়ে গাড়িটা একটু আগেই এসে পৌঁছেছে। শ্মশানযাত্রার
আয়োজন হচ্ছে। কিছুক্ষণ দাঁড়ালেন সবাই। এর মধ্যে বীতশোককে চোখে পড়ল। বীতশোকও বাড়িতে
অনেক ছাত্র পড়ায়। যদিও কোচিং সংক্রান্ত বিষয়ে ওর সাথে কখনই কথা বলেননি বিকেডি, আজ
সমস্যায় পড়ে প্রথা ভাঙলেন। শোকসন্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেও একটু সুযোগ করে বীতশোককে
আলাদা ডেকে নিয়ে নিজের সমস্যাটা খুলে বললেন। বীতশোক একটু আশ্চর্য হলেন। তাই নাকি।
আমার কাছেও তো অনেক মুসলিম ছাত্র পড়ে। আমাকে তো কেউ কিছু বলেনি এখনও। এরকম হলে তো
সত্যিই সমস্যা হয়ে যাবে। নিজের সংকট বীতশোকের মধ্যেও কিছুটা ছড়িয়ে দিতে পেরেছেন
দেখে একটু যেন হাল্কা লাগল বিকেডির। বীতশোক এরপর অনেকটা সান্ত্বনার মত বলল, দেখো,
হয়তো এটা ছুটকো ঝামেলা। মিটে যাবে। সন্ধ্যা পার করে সবাই বেরোলেন। বিকেডি হেঁটেই
ফিরছিলেন। সারা শহর জুড়ে কারেন্ট নেই। ঘুটঘুটে অন্ধকার। নিজের গলিতে এসে সাবধানে
পা ফেলেন বিকেডি। একটু বেকায়দায় পা পড়লে কেলেঙ্কারি হবে। পা মচকে যেতে পারে, ভাঙতেই
বা কতক্ষণ। বিরক্ত লাগল বিকেডির। একটা জায়গা বটে, না আছে ভাল রাস্তাঘাট, না আছে আলো,
না আছে জল, না ভাল চিকিৎসার ব্যবস্থা। একটা প্রতিবাদ করারও কেউ নেই। সাবধানে গলি
পার হয়ে গেট খুলে বাড়ির দরজায় নক করলেন বিকেডি। ইনভার্টারের আলো জ্বলছে ঘরে।
স্ত্রী এসে দরজা খুললেন।
ঘরে ঢুকে চোখে পড়ল, ডেস্কের ওপর দুটো
ছোট ছোট কাগজ। লিফলেটের মত। জুতো খুলে ঘরে ঢোকার সময় লিফলেট দুটো উঠিয়ে নিলেন
বিকেডি। ড্রয়িং রুমের সেন্টার টেবিলে রেখে বাথরুমে ঢুকলেন। ফিরে এসে চেয়ারে বসলেন।
স্ত্রী চা এনে রেখেছেন। চায়ে চুমুক দিতে দিতে বিকেডি লিফলেট দুটো হাতে নিলেন। স্ত্রী
বললেন, একটা দিয়ে গেছে সকালে যে ছেলেটা এসেছিল, বাচ্চা মত, ও। ছেলেটা বোধ হয় খারাপ
নয়। বেশ আন্টি আন্টি করল। আর অন্যটা? বিকেডি প্রশ্ন করেন। পাড়ারই দুজন ভদ্রলোক
এসেছিলেন। নাম জানি না। কাগজ দুটো পড়েন বিকেডি। একটিতে লিখেছে, গরুর মাংস ফেলে
হিন্দুদের মন্দির অপবিত্র করার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে আগামী রবিবার শহরের শুভবুদ্ধি
সম্পন্ন মানুষের একটা মিছিল বের করা হবে। সকলের উপস্থিতি প্রার্থনীয়। আর অন্যটাতে,
ওই রবিবারই, শহরের শুভ-বুদ্ধিসম্পন্ন নাগরিকদের একটি ডেপুটেশন যাবে জেলা উপায়ুক্তর
কাছে, রাস্তাঘাটের সংস্কার, বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান ইত্যাদির দাবীতে। সবাইকে
অনুরোধ, দলমত নির্বিশেষে এই কর্মসূচীতে যোগ দিন। বিকেডি দুটো কাগজই দলামচা করে বাজে
কাগজের ঝুড়িতে ফেলে দিলেন। চায়ের কাপে আরেকটা চুমুক দিয়ে স্ত্রীকে বললেন, দুটো ডাইজেস্টিভ
বিস্কিট দাও তো!
______________
(একা এবং কয়েকজন, গুয়াহাটি, ডিসেম্বর ২০১৫)
No comments:
Post a Comment